প্রকাশিত: ১৭/০৫/২০১৮ ১০:২৮ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:৫১ এএম

ঢাকা: ঝড়-বৃষ্টি নয়, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের বড় ঝুঁকি হচ্ছে কারিগরি ক্রটি। এই ক্রটির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অস্বয়ংক্রিয় বিতরণ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, অনুন্নত জেনারেটর ব্যবহার এবং বিতরণ ও উৎপাদন কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয়হীনতা। মূলত এসব ক্রটির কারণেই জাতীয় গ্রিড বা সঞ্চালন লাইনের বিপর্যয় ঘটে।

সম্প্রতি ‘ঝড়, বৃষ্টি ও ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সিস্টেমের সংকটে উৎপাদন চাপ নিয়ন্ত্রণ করে সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি (স্বাভাবিক প্রবাহ) স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রেখে জাতীয় গ্রিডকে বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য করণীয়’ নির্ধারণে বিদ্যুৎ বিভাগ গঠিত এক কমিটির প্রতিবেদন এসব তথ্য উঠে আসে। গত মাসের শেষে এই প্রতিবেদন বিদ্যুৎ বিভাগে জমা দেয়া হয়। চার সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির প্রধান ছিলেন বিদ্যুৎ খাতের নীতি গবেষণা শাখা পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুরাতন মেশিন ও বিতরণ লাইনের কারণে অনেক সময় সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। তবে এবার আমরা প্রিভেন্টিভ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় এখন পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এটাকে ধরে রেখে পর্যাক্রমে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করার কাজ চলছে।’

প্রতিবেদনে বিদ্যুৎখাতের বিদ্যমান সমস্যাকে তিন ভাগে তুলে ধরে আলাদা আলাদা সমাধানের সুপারিশ করা হয়েছে। উৎপাদনে সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সিস্টেমের ডিমান্ড অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। জেনারেটরের গভর্নরের কারিগরি সীমাবন্ধতা থাকায় অনেক প্ল্যান্টের উৎপাদন কখনও দ্রুত কমে যায় আবার কখনো বেড়ে যায়। এছাড়া যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র ইঞ্জিনভিত্তিক, সেগুলো ফ্রি গভর্নর মুডে (এফজিএমও) চালানোর উপযোগী নয়।’ উল্লেখ্য যে, ‘এফজিএমও’ হচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সময় লোড কম/বেশি হওয়ার বিষয়টি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র (আইপিপি) থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে এফজিএমও সিস্টেম শর্ত চূড়ান্ত না করায় অনেকে এটি মানছে না। তবে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের রক্ষায় আগামীতে সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র ফ্রি এফজিএমও মুডে চালানের সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে বিদ্যমান চুক্তি সংশোধনের কথা বলা হয়।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, “শুরুতে যেসব আইপিপি’র সাথে চুক্তি হয়েছে সেগুলোতে হয়তো এফজিএমও মুডের ব্যবস্থা নেই। তবে গত সাত বছরের মধ্যে যেসব আইপিপির সাথে চুক্তি হয়েছে সবগুলোতেই এফজিএমও মুড মেনেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। চুক্তি করার সময় পিডিবি এটা খুব গুরুত্ব সহকারে দেখে থাকে।”

প্রতিবেদনে সঞ্চালন লাইনের ক্রটি তুলে ধরে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্র অপারেটর ও জাতীয় লোড ডেচপস সেন্টারের (এনএলডিসি) মধ্যে নিবিড় সংযোগ ও সমন্বয়ের অভাব আছে। ফলে জরুরি প্রয়োজনের এনএলডিসি সরাসরি প্ল্যান্ট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

বিতরণ লাইনের সমস্যা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৩ কেভি ফিডারের প্রটেকশন স্কিন অত্যাধিক দুর্বল ও অপ্রতুল হওয়ায় গ্রিডের মেইন ট্রান্সফরমারের ইনকামিং ব্রেকার ট্রিপ করে। এতে গ্রিডে সিস্টেমে ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া ঝড়ের সময় এমনকি সাধারণ বৃষ্টির সময়ও দুর্ঘটনার ভীতি থেকে একাধিক ফিডার এক সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়। যার ফলে সঞ্চালন লাইন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। অনেক বিতরণ কোম্পানিতে এখন পর্যন্ত স্ক্যাডা সিস্টেম নেই। ফ্রিকোয়েন্সি রেসপন্সের জন্য যা জরুরি। এছাড়া বিতরণ সংস্থা ও কোম্পানিগুলোতে কার্যকর কন্ট্রোল রুমের অভাব রয়েছে। ফলে জরুরি প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুম কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।

বিতরণ পর্যায়ে এসব সমস্যা সমাধানে ৩৩ কেভি ফিডারে উন্নত মানের প্রকেটশন স্কিম বাস্তবায়ন করা এবং ফিডার বন্ধ করার আগে এনএলডিসিকে জানানো এবং প্রত্যেক বিতরণ সংস্থা ও কোম্পানি স্ক্যাডা সিস্টেম চালুর সুপারিশ করা হয়।

পাঠকের মতামত

আজ পহেলা বৈশাখ

আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ-বাংলা নববর্ষ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩১ ...

বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

বান্দরবানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালিত রুমা,রোয়াংছড়ি ও থানচি এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। ...

বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

পটিয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই আরোহী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী এলাকার মোঃ ...